স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক ১০ দিনব্যাপী জাতীয় জমকালো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রতিবেশী ৫টি দেশের রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপ্রধানগণ আসেন বাংলাদেশ সফরে। তাদের মধ্যে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডাঃ লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম সোলিহ এবং শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে। তাঁরা সবাই জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তবে এক বাক্যে সমধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন পারস্পরিক যোগাযোগ তথা সংযুক্তি অর্থাৎ কানেকটিভিটির ওপর। বর্তমান বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যা একটি চরম ও পরম বাস্তবতা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের দুই শীর্ষ নেতার ৬২ অনুচ্ছেদ সংবলিত যৌথ বিবৃতিটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা আবশ্যক। তাতে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে উপ আঞ্চলিক সহযোগিতার পাশাপাশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ত্রিদেশীয়- ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড মহাসড়কের সঙ্গে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার ওপর। প্রস্তাবিত এই মহাসড়কের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১ হাজার ১৬০ কিলোমিটার পড়েছে মিয়ানমারে। বাংলাদেশ এই ত্রিদেশীয় মহাসড়কে সংযুক্ত হতে সহযোগিতা চেয়েছে ভারতের। এর জন্য মিয়ানমারের সঙ্গেও আলোচনায় প্রস্তুত ঢাকা। সেটা বাস্তবায়ন হলেই খুলে যাবে উন্নয়নের সিংহদুয়ার। সন্নিহিত অঞ্চলে বাড়বে পারস্পরিক বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান, উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি বাংলাদেশের ফেনী নদীর ওপর ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার মৈত্রী সেতু নির্মাণের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ভারত ও বাংলাদেশ সংযুক্ত হয়েছে। এই সেতু ত্রিপুরা-আগরতলাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হলো। এর ফলে ভারত চট্টগ্রাম নৌবন্দর এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০০ কিলোমিটার। এর ফলে শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বেশি অবাধ এবং সম্প্রসারণের পথ সুগম হলো। এককথায় মৈত্রী সেতু প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নতুন বাণিজ্য করিডর, যার ফলে ব্যবসাবাণিজ্য বাড়বে বহুল পরিমাণে। বাড়বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিনিয়োগ। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি সৃষ্টি হবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। অদূর ভবিষ্যতে জাপানও যুক্ত হতে যাচ্ছে এই করিডরে। বর্তমান বিশ্বে কানেকটিভিটি বা পারস্পরিক যোগাযোগ একটি বাস্তবতা, যা সংযুক্ত বিশ্বায়নের সঙ্গে। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সর্বোপরি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর পঞ্চাশ বছরে এটি একটি অনন্য উপহার ও সংযোজন অবশ্যই। তদুপরি উত্তর-পূর্ব ভারতের ল্যান্ডলক ৭টি রাজ্যে বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্য বাড়ানোসহ বিনিয়োগের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে, যা কাজে লাগাতে হবে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের। ইতোমধ্যে বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর এবার শুরু হয়েছে বিবিআইএন কার্যক্রম। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপাল আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ২৫ বছর ধরে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এও সত্য যে, কম-বেশি আন্তঃবাণিজ্য চলছেও দেশগুলোর মধ্যে। সড়ক যোগাযোগও রয়েছে। তবে পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির আওতায় যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকাঠামো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বহুলাংশে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত ইতোমধ্যে নেপালে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের স্বার্থে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা একান্ত দরকার। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বাড়বে ১৭ শতাংশ আর সে দেশের ৮ শতাংশ। রফতানি বাড়তে পারে প্রায় তিন গুণ। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে রফতানি বাড়বে দ্বিগুণ। মূলত এটাই সংযুক্তি তথা কানেকটিভিটির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুফল।
Leave a Reply